ধর্মীয় দর্শন ডেস্ক: শান্তি ও ন্যায়ের ধর্ম ইসলামে শ্রমিকের পূর্ণ সম্মান, মর্যাদা ও অধিকার দেয়া হয়েছে আজ থেকে প্রায় চৌদ্দশত বছর আগেই। শ্রমিকদের প্রতি সর্বোত্তম ইনসাফ ও সুবিচারের নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম।ইসলামে শ্রমের প্রতি যেমন মানুষকে উৎসাহিত করা হয়েছে, তেমনি শ্রমিকের সম্মান, মর্যাদা ও অধিকার প্রতিষ্ঠার কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ইসলামী বিধান অনুযায়ী কৃষক, শ্রমিক বা কোনো কর্মজীবীকে কেউ বিনা পারিশ্রমিকে খাটাতে পারবে না। শ্রমজীবী মানুষদের সম্পর্কে কুরআন মাজীদে মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “নিশ্চয়ই আমি (আল্লাহ) মানুষকে সৃষ্টি করেছি পরিশ্রমী বা শ্রমজীবী করে।” (সূরা বালাদ : আয়াত-৪)
হাদীস শরীফ-এ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন হুযূরে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, শ্রমিকের মজুরি নির্ধারণ না করে তাকে কাজে নিয়োগ করতে নিষেধ করেছেন। (সুনানে বায়হাকী) শ্রমিকের মজুরি প্রদান সম্পর্কে হুযূরে পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুস্পষ্ট ঘোষণা করেছেন, ‘শ্রমিকের গায়ের ঘাম শুকানোর আগেই তার প্রাপ্য মজুরি দিয়ে দাও।’ (ইবনে মাযাহ)
একমাত্র দ্বীন ইসলামই চৌদ্দশত বৎসর পূর্বে শ্রমিকের স্বার্থ সংরক্ষণ করেছে এবং তাদের যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা প্রদান করেছে। এমনকি শ্রমিকদের কর্মঘণ্টা ৮ ঘণ্টা হওয়ার বিষয়টিও ইসলামেরই নির্দেশ যার প্রমাণ হাদীছ শরীফ-এ রয়ে গেছে।
সূতরাং শ্রমিকদের হুকুম-আহকাম সম্পর্কে অর্থাৎ শ্রমিকের সম্মান ও অধিকার সম্পর্কে কুরআন মাজীদ ও সুন্নাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট।ইসলাম শ্রমিকদের শ্রমের প্রতি যেমন উৎসাহিত করেছে তেমনি শ্রমিকের প্রতি সুবিচার, তার সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার প্রতি মানুষকে নির্দেশ দিয়েছে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) শ্রমিক ও শ্রমজীবী মানুষকে অত্যন্ত সম্মানের চোখে দেখতেন। শ্রমিকদের উৎসাহ প্রদান করতেন।কিন্তু আফসুসের বিষয়,বর্তমান সমাজে মালিক ও শ্রমিকের মধ্যে দেখা যায় বিরাট বৈষম্য। উদায়াস্ত উষ্ণ ঘামের স্যাঁতস্যাঁতে গন্ধ নিয়ে সারাদিন খেটে যে শ্রমিক তার মালিকের অর্থযন্ত্রটি সচল রাখে, সেই মালিক একবার চিন্তাও করে না যে, তারাও মানুষ, তাদেরও মৌলিক কিছু চাহিদা আছে, তাদেরকে কষ্ট দিলে তাদের অন্তরেও ব্যথা অনুভূত হয়। সুন্দর এ পৃথিবীর রূপ লাবণ্যতায় শ্রমিকদের কৃতিত্বই অগ্রগণ্য।
কিন্তু সভ্যতার কারিগর এ শ্রেণীটি সর্বদাই উপেক্ষিত, অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত।অথচ রাসুলে কারীম (সা.) মালিক ও শ্রমিকের সম্পর্কে বলেন, তাদের সম্পর্ক হল পিতা এবং সন্তানের ন্যায়। পিতা-সন্তানের একে অন্যের প্রতি যেমন অধিকার রয়েছে, তেমনি মালিক-শ্রমিকেরও একে অন্যের উপর কিছু অধিকার-কর্তব্য রয়েছে। মালিকের কর্তব্য হল শ্রমিকের সাথে আন্তরিকতাপূর্ণ আচরণ করা, পরিবারের সদস্যদের মতই তাদের আপ্যায়ন করা। তাদের সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনা করা, সর্বোপরী শ্রমিককে যথা সময়ে তার ন্যায্য মজুরি প্রদান করা।
অপরদিকে শ্রমিকের কর্তব্য হলো, কোন প্রকার অবহেলা না করে সৎ, নিষ্ঠা ও বিশ্বস্থতার সাথে তার উপর আরোপিত কর্তব্য যথাযথভাবে পালন করা। তবেই মালিক ও শ্রমিকের মধ্যে সু-সম্পর্ক তৈরী হবে।তাতে মালিকরা পাবে ‘পূর্ণ শ্রম’ এবং শ্রমিকরা পাবে তাদের শ্রমের ন্যায্য মর্যাদা। আল্লাহ পাক আমাদের মালিক ও শ্রমিক ভাইদেরকে বিষয়টি বোঝার ও আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন !!!
লেখকঃ
মোস্তফা কবীর সিদ্দিকী
সিনিয়র লেকচারার , ইসলামিক স্টাডিজ ডিপার্টমেন্ট,
সাউথইস্ট ইউনির্ভাসিটি।
ইমেইলঃ mostafakabir_seu@yahoo.com
অগ্রদৃষ্টি.কম // এমএসআই